সৌদি আরব বেতন কত | সৌদি আরব ভিসার দাম কত
সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের একটি অন্যতম ধনী ও তেলসমৃদ্ধ দেশ। ইসলামের দুই পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনা এখানেই অবস্থিত। আর সৌদি আরবের রাজধানীর নাম হলো রিয়াদ।প্রতিবছর অসংখ্য বাংলাদেশি নাগরিক চাকরি, ব্যবসা, হজ, ওমরাহ কিংবা শিক্ষার উদ্দেশ্যে সৌদি আরব সফর করে থাকেন। তবে সৌদি আরবে বৈধভাবে যেতে হলে নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
সৌদি আরবে যাওয়ার উপায়?
সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বৈধ ভিসা গ্রহণ আবশ্যক। নিচে প্রযোজ্য ভিসার ধরনগুলো তুলে ধরা হলোঃ
- ওয়ার্ক ভিসা (Work Visa)
- হজ ও ওমরাহ ভিসা
- স্টুডেন্ট ভিসা (Student Visa)
- পরিবার ভিসা (Family Visa)
- বিজনেস/ভিজিট ভিসা (Business/Visit Visa)
সরকারি উপায়ে সৌদি যাওয়া (BOESL-এর মাধ্যমে)
বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান BOESL (Bureau of Manpower, Employment and Training) এর মাধ্যমে সৌদি আরবে বৈধভাবে কাজের জন্য যাওয়া সম্ভব।
এ ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র, কাজের বিবরণ ও স্পন্সরের অনুমোদনপত্র আবশ্যক। পেশাভিত্তিক (হাউজকিপার, ইলেকট্রিশিয়ান, ড্রাইভার, হোটেল স্টাফ ইত্যাদি) নিয়োগ দেওয়া হয়।
বেসরকারি উপায়ে সৌদি যাওয়া
অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি বা পরিচিত স্পন্সরের মাধ্যমে সৌদি আরবে যাওয়া যায়। তবে অবশ্যই এজেন্সির BMET এর লাইসেন্স আছে কি না তা যাচাই করে নেওয়া উচিত।
সৌদি ভিসার আবেদন পদ্ধতি?
সৌদি ভিসার আবেদন অনলাইনের মাধ্যমে ও দূতাবাসের মাধ্যমে করা যায়। সাধারণভাবে আবেদন প্রক্রিয়া নিম্নরূপঃ
- স্পন্সরের পক্ষ থেকে ভিসা অনুমোদন পত্র সংগ্রহ।
- সৌদি দূতাবাসের অফিসিয়াল ভিসা সিস্টেমে আবেদন ফরম পূরণ।
- ভিসা ফি জমা প্রদান।
- অনলাইনে বা দূতাবাসে কাগজপত্র জমা ও সাক্ষাৎকার।
- মেডিকেল পরীক্ষা ও গামকা রিপোর্ট (GAMCA)।
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র?
নিম্নলিখিত সাধারণ কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন হয়, তবে ভিসার ক্যাটাগরি অনুসারে কিছু বাড়তি কাগজপত্র লাগতে পারে।
- ৬ মাসের বৈধ পাসপোর্ট।
- পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি।
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ও NID
- মেডিকেল রিপোর্ট (GAMCA অনুমোদিত)।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়)।
- স্পন্সরের ভিসা অনুমোদন কপি।
- চাকরির অফার লেটার বা কন্ট্রাক্ট লেটার (ওয়ার্ক ভিসার ক্ষেত্রে)।
বিশেষ ভিসার জন্য অতিরিক্ত কাগজপত্র?
- হজ ভিসাঃ হজ এজেন্সির রেজিস্ট্রেশন ও অনুমোদন।
- স্টুডেন্ট ভিসাঃ সৌদি আরবের বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার ও ব্যাংক সাপোর্ট।
- ড্রাইভার ভিসাঃ বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও অভিজ্ঞতার প্রমাণ।
- পারিবারিক ভিসাঃ বিবাহ/জন্ম সনদ, সৌদি বাসিন্দার (স্বামী/স্ত্রী/পিতামাতা) আইকামা কপি।
সৌদি আরব বেতন কত?
বেতন পেশা ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ঃ
- সাধারণ শ্রমিকের বেতনঃ ৮০০–১২০০ সৌদি রিয়াল (প্রায় ২৫,০০০–৪০,০০০ টাকা)।
- দক্ষ শ্রমিকের বেতনঃ ১৫০০–২৫০০ রিয়াল (প্রায় ৫০,০০০–৮০,০০০ টাকা)।
- প্রফেশনালদের বেতন (ড্রাইভার, টেকনিশিয়ান): ৩০০০+ রিয়াল পর্যন্ত (প্রায় ১ লাখ+ টাকা)।
ভিসা ও ভ্রমণ খরচ?
সরকারি উপায়ে (BOESL)
- ভিসা ও অন্যান্য খরচঃ আনুমানিক ৪–৫ লাখ টাকা।
- সম্পূর্ণ খরচঃ আনুমানিক ৫–৬ লাখ টাকা।
বেসরকারি উপায়ে
- ভিসা খরচঃ ৫–৬ লাখ টাকা।
- সম্পূর্ণ খরচঃ প্রায় ৬–৮ লাখ টাকা (পেশা ভেদে ভিন্ন)।
বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব ভ্রমণের সময়কাল?
বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে পৌঁছাতে সাধারণত ৭–১০ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে ট্রানজিটসহ ভ্রমণ সময় কিছুটা বেশি হতে পারে।
সৌদি আরবের মুদ্রার নাম কি?
- সৌদি আরবের মুদ্রার নামঃ সৌদি রিয়াল (SAR)।
- ১ সৌদি রিয়াল ≈ ৩০ টাকার কাছাকাছি (কারেন্সি রেট পরিবর্তনশীল)।
সৌদি আরবে বাংলাদেশি দূতাবাসের ঠিকানা?
- Embassy of Bangladesh in Riyadh, Saudi Arabia
- ঠিকানা: Diplomatic Quarter, Riyadh 11693, Saudi Arabia
- ফোন: +966-11-488-1223
- ওয়েবসাইট: https://riyadh.mofa.gov.bd
আরও পড়ুনঃ ইরান বেতন কত | ইরান ভিসার দাম কত
সতর্কতা
- সৌদি আরবগামী অনেক ভুয়া এজেন্সি ও দালাল অবৈধ পথে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে থাকে।
- সব সময় বৈধ ও সরকারি অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমেই আবেদন করুন।
- গামকা রিপোর্ট ও স্পন্সর ভিসা ছাড়া সৌদি আরবে যাওয়া বৈধ নয়।
FQAs: সৌদি আরব বেতন কত | সৌদি আরব ভিসার দাম কত
সৌদি ভিসার প্রক্রিয়া কতদিন লাগে?
সাধারণত ২–৪ সপ্তাহ লাগতে পারে, তবে কাগজপত্র সম্পূর্ণ হলে দ্রুতও হতে পারে।
মহিলারা কি সৌদি যেতে পারেন?
হ্যাঁ, ওয়ার্ক ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা ও পারিবারিক ভিসায় মহিলারা যেতে পারেন। হাউজমেইড ও নার্সের চাহিদাও অনেক।
সৌদি আরবে কি স্থায়ী হওয়া যায়?
সৌদি আরব সাধারণত ওয়ার্ক বা রেসিডেন্স ভিসা দেয়, তবে স্থায়ী নাগরিকত্বের সুযোগ সীমিত।
শেষ কথা
সৌদি আরবে কাজ, হজ, ওমরাহ বা শিক্ষার উদ্দেশ্যে যেতে হলে অবশ্যই বৈধ উপায় অনুসরণ করুন। ভিসা আবেদন, কাগজপত্র প্রস্তুতি ও খরচ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখলে প্রতারণা থেকে বাঁচা সম্ভব।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিশ্বাসযোগ্য এজেন্সি বা সরকারি মাধ্যম বেছে নিয়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো।