পড়াশোনা

বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়

বিড়াল আমাদের অনেকের ঘরের প্রিয় সঙ্গী। কিন্তু এই নিরীহ প্রাণীটি কখনো কখনো রেগে গিয়ে কামড় বা আঁচড় দিতে পারে। অনেকেই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেন না, কিন্তু এটি হতে পারে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ।বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়বিশেষত, জলাতঙ্ক (Rabies) নামক একটি মারাত্মক ভাইরাস এই কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে, যা সময়মতো চিকিৎসা না নিলে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।

বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়?

যদি কোনো বিড়াল কামড়ায়, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জলাতঙ্ক টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই টিকাটি একবারেই শেষ হয় না। এর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসরণ করতে হয়।

কামড়ের দিন অর্থাৎ প্রথম দিন এক ডোজ নিতে হবে। এরপর তৃতীয় দিন, সপ্তম দিন, চৌদ্দতম দিন এবং ২৮তম দিনে আরও চারটি ডোজ নিতে হয়। অর্থাৎ মোট পাঁচটি ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে।

তবে আপনি যদি গত পাঁচ বছরে জলাতঙ্কের সম্পূর্ণ টিকা নিয়ে থাকেন, তাহলে শুধু প্রথম ও তৃতীয় দিনের দুইটি বুস্টার ডোজ নিলেই যথেষ্ট।

বিড়ালের আঁচড়ও কি ঝুঁকিপূর্ণ?

অনেকেই আঁচড়কে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু যদি আঁচড়ে ত্বকে কেটে গিয়ে রক্ত বের হয় বা গভীর ক্ষত হয়, তাহলে সেটিও জলাতঙ্কের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

বিশেষ করে ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি বিপজ্জনক। আঁচড় লাগার পর জ্বর, ক্ষতস্থানে ফোসকা বা ব্যথা, এমনকি ইনফেকশনও দেখা দিতে পারে। তাই আঁচড় হলেও দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

বিড়াল কামড়ালে করণীয় কী?

  • প্রথমে কামড় বা আঁচড়ের জায়গাটি পরিষ্কার পানি ও সাবান দিয়ে ১৫–২০ মিনিট ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
  • এরপর জীবাণুনাশক যেমন স্যাভলন বা ডেটল ব্যবহার করুন।
  • ক্ষত গভীর না হলে খোলা রেখে শুকাতে দিন। তবে বেশি রক্ত পড়লে ডাক্তারের কাছে যান।
  • যত দ্রুত সম্ভব কাছাকাছি হাসপাতালে গিয়ে জলাতঙ্কের টিকা নিন।
  • টিকাদানের পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ডোজসমূহ সম্পূর্ণ করুন।
  • গভীর ক্ষতের ক্ষেত্রে চিকিৎসক টিটেনাস ইনজেকশন দেওয়ার পরামর্শও দিতে পারেন।

টিকার দাম কেমন হয়?

বাংলাদেশে Rabies Vaccine সাধারণত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। সরকারি হাসপাতালে অনেক সময় এটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়। তবে বেসরকারি হাসপাতাল বা ফার্মেসিতে নিতে হলে কিছুটা খরচ হতে পারে।

বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ?

অন্যান্য পোষা প্রাণীর মতো বিড়ালও জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এটি একটি ভয়ানক ও প্রাণঘাতী ভাইরাসজনিত রোগ। জলাতঙ্কের ভাইরাস সাধারণত শেয়াল, বাদুড়, ইঁদুর, রেকুন ইত্যাদি বন্য প্রাণীর শরীরে বাস করে

এবং সেখান থেকে কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে বিড়ালের শরীরে প্রবেশ করে। এরপর এই ভাইরাসে সংক্রমিত বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর দেহেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এই রোগে ভাইরাসটি প্রথমে স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে এবং ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। বিড়ালের ক্ষেত্রে সংক্রমণ থেকে লক্ষণ প্রকাশ পর্যন্ত সাধারণত ২ থেকে ৬ সপ্তাহ সময় লাগে।

এই সময়ের মধ্যে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা যায়, যা অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ একবার জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে বিড়ালের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ এবং এই রোগের কার্যকর কোনো চিকিৎসা নেই।

তবে, সময়মতো প্রতিষেধক (vaccine) দিয়ে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিচে বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণসমূহ তুলে ধরা হলোঃ

জ্বর আসা বা প্যারালাইসিস

শরীরের কোনো অংশ অবশ হয়ে যাওয়া বা চলাফেরায় সমস্যা দেখা দেওয়া।

আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন

সাধারণত শান্ত স্বভাবের বিড়াল আচমকা উত্তেজিত বা উদ্ভট আচরণ করতে শুরু করে।

পাগলসুলভ আচরণ

অস্থিরতা, ঘরের ভেতরে ছুটাছুটি করা বা দেয়ালে মাথা ঠোকানো ইত্যাদি।

আক্রমণাত্মক আচরণ

হঠাৎ হিংস্র হয়ে ওঠা, কামড়ানো বা আঁচড় দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া।

অস্বাভাবিক আওয়াজ

বিড়ালের ডাকের স্বরে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়; অনেক সময় এটি কর্কশ বা গম্ভীর শোনায়।

লালা ঝরতে থাকা

মুখ দিয়ে ক্রমাগত লালা পড়া, যা ভাইরাস ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম।

ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া

শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যাওয়া এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।

ভয় ও পানি ভীতি

চারপাশে ভয় পাওয়া, আলো বা পানি দেখলে আতঙ্কিত হয়ে যাওয়া এবং পানি পান বন্ধ করে দেওয়া।

করণীয়ঃ

এই লক্ষণগুলো দেখা গেলে দ্রুত একটি অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আক্রান্ত বিড়ালকে আলাদা করে রাখতে হবে এবং পরিবারের সদস্যদের সাবধানে থাকতে হবে।

তবে সবচেয়ে ভালো প্রতিকার হচ্ছে বিড়ালকে নির্ধারিত সময় অন্তর জলাতঙ্ক প্রতিরোধক টিকা (Rabies Vaccine) দিয়ে এই রোগ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

সচেতন থাকুন, পোষা প্রাণীকে ভালোবাসুন, আর সময়মতো টিকা দিয়ে জলাতঙ্ক থেকে মুক্ত থাকুন।

বিড়ালের জলাতঙ্ক কতটা ভয়ংকর?

জলাতঙ্ক ভাইরাস মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে এবং একবার এর লক্ষণ দেখা দিলে সাধারণত তা মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যায়।

এই ভাইরাস মূলত সংক্রমিত প্রাণী যেমনঃ শেয়াল, বাদুড় বা অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মাধ্যমে বিড়ালের শরীরে আসতে পারে। এরপর সে যদি মানুষকে কামড় দেয়, তাহলে জীবাণুটি মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে।

বিড়ালের জন্য নিয়মিত টিকাদান জরুরি কেন?

আপনার বিড়ালের সুস্থতা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তার মাধ্যমে যেন আপনার বা পরিবারের কারও কোনো রোগ না ছড়ায়, সেটাও নিশ্চিত করা জরুরি।

এজন্য বিড়ালের বয়স ৪–৬ সপ্তাহ হলেই প্রথম টিকা দেওয়া উচিত। এরপর ১০–১২ সপ্তাহ এবং ১৪–১৬ সপ্তাহে দুটি বুস্টার ডোজ দিতে হয়। এরপর প্রতি বছর একটি করে বুস্টার ডোজ দিতে হয়।

আরও পড়ুনঃ কালিম পাখির দাম

১. বিড়ালের জলাতঙ্ক কীভাবে ছড়ায়?

বিড়ালের শরীরে জলাতঙ্ক ভাইরাস সাধারণত বন্য প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে প্রবেশ করে। এরপর আক্রান্ত বিড়ালের কামড় বা লালার সংস্পর্শে এসে মানুষ বা অন্য প্রাণীও আক্রান্ত হতে পারে।

২. জলাতঙ্কে আক্রান্ত বিড়াল কতদিন বাঁচে?

জলাতঙ্ক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর লক্ষণ প্রকাশের পর থেকে সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই বিড়ালের মৃত্যু হয়। এই রোগের কার্যকর কোনো চিকিৎসা নেই।

৩. এই রোগের কোনো চিকিৎসা আছে কি?

না, জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে কার্যকর চিকিৎসা নেই। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সময়মতো টিকা দিলে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করা যায়।

৪. বিড়ালের জলাতঙ্ক প্রতিরোধের টিকা কখন দিতে হয়?

সাধারণত বিড়াল ৩ মাস বয়সে পৌঁছালে প্রথম জলাতঙ্ক টিকা দেওয়া হয়। এরপর প্রতি বছর একটি বুস্টার ডোজ দেওয়া উচিত।

৫. জলাতঙ্কে আক্রান্ত বিড়ালকে কীভাবে চিনবো?

আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন, হিংস্রতা, লালা ঝরানো, পানি না খাওয়া, অস্বাভাবিক আওয়াজ এবং প্যারালাইসিসসহ বেশ কিছু উপসর্গ দেখে অনুমান করা যায়। তবে নিশ্চিতভাবে জানতে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৬. আক্রান্ত বিড়াল কাউকে কামড়ালে কী করতে হবে?

প্রথমেই কামড়ের স্থান পরিষ্কার পানি ও সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধক টিকা নিতে হবে।

৭. বাসায় পোষা বিড়াল থাকলে কী ধরনের সতর্কতা নেওয়া উচিত?

  • নিয়মিত টিকা দেওয়া
  • অপ্রয়োজনে বাইরে যেতে না দেওয়া
  • অসুস্থ বা বন্য প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখা
  • হঠাৎ আচরণে পরিবর্তন দেখলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া

শেষ কথা

বিড়াল আমাদের ভালোবাসার একটি প্রাণী। কিন্তু তার আচরণে কোনো ব্যতিক্রম দেখা দিলে বা সে কামড় বা আঁচড় দিলে বিষয়টিকে হালকাভাবে না দেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে।

সময়মতো টিকা নিলে জলাতঙ্কের ভয়াবহতা থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করা সম্ভব। সতর্ক থাকুন, নিরাপদ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button