চীন বেতন কত | চীন ভিসার দাম কত
চীন এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ। শিল্প, প্রযুক্তি, বাণিজ্য এবং উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এই দেশটিতে প্রতিবছর অনেক বাংলাদেশি নাগরিক কাজ, পড়াশোনা বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যেতে আগ্রহী হন।তবে চীনে বৈধভাবে যাওয়ার জন্য সঠিক তথ্য, প্রক্রিয়া এবং ডকুমেন্টেশন জানা অত্যন্ত জরুরি। চীনের রাজধানীর নাম হলো (Beijing)।
চীন যাওয়ার উপায়?
চীনে যাওয়ার বৈধ উপায় হলো উপযুক্ত ভিসা গ্রহণ করা। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য নিচের প্রধান ভিসা ক্যাটাগরিগুলো প্রযোজ্যঃ
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসা (Z-Visa)
- স্টুডেন্ট ভিসা (X1/X2-Visa)
- ব্যবসায়িক ভিসা (M-Visa)
- ট্যুরিস্ট ভিসা (L-Visa)
- পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসা (Q1/Q2-Visa)
সরকারি উপায়ে
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের বোয়েসেল (BOESL) এর মাধ্যমে সরাসরি চীনে কর্মী প্রেরণের কোনো চুক্তি নেই। তবে ভবিষ্যতে যদি চুক্তি হয়, তাহলে BOESL ও BMET এর ওয়েবসাইটে ঘোষণা পাওয়া যাবে।
বেসরকারি উপায়ে
অনুমোদিত ও রেজিস্টার্ড বিদেশগামী কর্মসংস্থান এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে চীনের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া যায়। এছাড়া শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও পর্যটকেরা ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করে ভিসা নিতে পারেন।
চীন ভিসা আবেদনের নিয়মাবলী?
চীনের ভিসা আবেদন সাধারণত অনলাইনে শুরু করা হয়, তারপর সরাসরি ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসে আবেদন জমা দিতে হয়।
ভিসা আবেদনের ধাপসমূহ?
- চীন দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
- আবেদন ফি অনলাইনে বা ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
- ফরম প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নির্ধারিত তারিখে সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হতে হবে।
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র?
সাধারণভাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
- কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদী বৈধ পাসপোর্ট
- সদ্য তোলা রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- মেডিকেল সার্টিফিকেট (ওয়ার্ক বা স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে)।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি
- ভিসা আবেদন ফরম
- আর্থিক সাপোর্টের প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্পন্সরশিপ ইত্যাদি)।
বিশেষ ভিসার জন্য অতিরিক্ত কাগজপত্র?
- ওয়ার্ক ভিসাঃ নিয়োগপত্র, ওয়ার্ক পারমিট, ইনভিটেশন লেটার, কোম্পানি লাইসেন্স।
- স্টুডেন্ট ভিসাঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার, JW202/JW201 ফর্ম, পূর্ববর্তী শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ।
- ব্যবসায়িক ভিসাঃ ইনভিটেশন লেটার, কোম্পানি প্রোফাইল, ট্রেড লাইসেন্স।
- ট্যুরিস্ট ভিসাঃ হোটেল বুকিং, ট্রাভেল ইটিনারারি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্পন্সরশিপ (প্রয়োজনে)।
চীন বেতন কত?
চীনে বেতন নির্ভর করে কাজের ধরণ ও দক্ষতার উপরঃ
- সাধারণ শ্রমিকঃ মাসিক ৮০০–১২০০ ইউএস ডলার (প্রায় ৯২,০০০ – ১,৪০,০০০ টাকা)।
- দক্ষ শ্রমিক ও টেকনিক্যাল কর্মীঃ মাসিক ১৫০০–২৫০০ ইউএস ডলার (প্রায় ১,৭০,০০০ – ২,৮০,০০০ টাকা)।
- শিক্ষক/প্রফেশনাল জবঃ ২০০০ ইউএস ডলার বা তার বেশি।
ভিসা এবং ভ্রমণ খরচ?
সরকারি উপায়ে
বর্তমানে নেই, তবে ভবিষ্যতে চুক্তি হলে খরচ হবেঃ
- ভিসা ফি ও মেডিকেল সহঃ ৫০,০০০–৭০,০০০ টাকা।
- সম্পূর্ণ খরচ (যাতায়াত, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি সহ): ২–৩ লাখ টাকা।
বেসরকারি উপায়ে
- ওয়ার্ক ভিসা প্যাকেজঃ প্রায় ৪–৭ লাখ টাকা।
- স্টুডেন্ট ভিসা খরচঃ প্রায় ৩–৫ লাখ টাকা (বিশ্ববিদ্যালয় ফি ও অন্যান্য খরচ ব্যতিরেকে)।
- ট্যুরিস্ট ভিসা খরচঃ প্রায় ১–২ লাখ টাকা।
ভ্রমণের সময়কাল?
ঢাকা থেকে চীনের মূল শহর যেমনঃ বেইজিং, সাংহাই বা গুয়াংজু যেতে সময় লাগে প্রায় ৫–১০ ঘণ্টা (ফ্লাইট ও ট্রানজিট অনুযায়ী)। সাধারণত চীনে একাধিক আন্তর্জাতিক রুট রয়েছে।
চীনের মুদ্রার নাম কি?
চীনের মুদ্রার নামঃ ইউয়ান (Renminbi – RMB)। ১ ইউয়ান = প্রায় ১৪–১৮ টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়)।
বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের ঠিকানা?
- Embassy of the People’s Republic of China in Bangladesh
- Plot No. 2 & 4, Embassy Road, Block-I, Baridhara, Dhaka-1212
- ফোন: +880-2-9840408
- ওয়েবসাইট: http://bd.china-embassy.gov.cn
সতর্কতা
বর্তমানে অনেক দালাল ও অবৈধ এজেন্সি কম খরচে চীনে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করছে। এদের ফাঁদে পড়ে অনেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাইঃ
- শুধুমাত্র বৈধ ও রেজিস্টার্ড এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করুন।
- নিজে যাচাই করে নিন চীনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে কিনা।
- দূতাবাসের অফিসিয়াল নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
আরও পড়ুনঃ মেক্সিকো বেতন কত | মেক্সিকো ভিসার দাম কত
FQAS: চীন বেতন কত | চীন ভিসার দাম কত
প্রশ্ন: চীনে পড়াশোনার খরচ কেমন?
উত্তর: বছরে আনুমানিক ২–৫ লাখ টাকা, তবে স্কলারশিপ থাকলে অনেকটাই ফ্রি।
প্রশ্ন: চীনে থেকে কী পিআর (Permanent Residency) পাওয়া যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, দীর্ঘমেয়াদি চাকরি ও নির্দিষ্ট শর্তপূরণে PR এর জন্য আবেদন করা যায়।
প্রশ্ন: IELTS লাগবে কি?
উত্তর: কিছু বিশ্ববিদ্যালয় IELTS চায় না, তবে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য IELTS প্রয়োজন হতে পারে।
শেষ কথা
চীনে কাজ, পড়াশোনা বা ভ্রমণের জন্য যেতে চাইলে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য নিয়ে, সঠিক কাগজপত্র ও আর্থিক প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত। অবৈধ পথে যাত্রা থেকে বিরত থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ ও সফল সিদ্ধান্ত।