মিশর বেতন কত | মিশর ভিসার দাম কত
মিশর, আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত একটি প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহাসিক নিদর্শনে ভরপুর দেশ। কায়রো এর রাজধানী, আর বিখ্যাত পিরামিড ও নীলনদের দেশ হিসেবে মিশরের খ্যাতি বিশ্বজোড়া।প্রতি বছর বহু বাংলাদেশি নাগরিক জীবিকা, পড়াশোনা কিংবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে মিশরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে বৈধভাবে মিশরে যেতে হলে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি অনুসরণ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মিশরে যাওয়ার উপায়?
বৈধভাবে মিশরে যাওয়ার প্রধান উপায় হলো বৈধ ভিসা গ্রহণ করা। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য মিশর সরকার যে সকল ভিসা অফার করে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
- স্টুডেন্ট ভিসা
- ট্যুরিস্ট ভিসা
- বিজনেস ভিসা
- পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসা
সরকারি উপায়
বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্থ BOESL (বোয়েসেল) অথবা সরকারি পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে কাজের উদ্দেশ্যে মিশরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে এই পদ্ধতিতে যেতে হলে অবশ্যই মিশরের শ্রম মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ওয়ার্ক পারমিট থাকতে হবে।
বেসরকারি উপায়
বিভিন্ন বৈধ ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত এজেন্সি বা রিক্রুটিং ফার্মের মাধ্যমে বেসরকারিভাবে মিশরে যাওয়া যায়। পরিচিত কাউকে ভরসা করেও অনেকে কাজের ভিসার ব্যবস্থা করে থাকেন।
মিশর ভিসা আবেদনের নিয়মাবলী?
বর্তমানে মিশর ভিসার জন্য অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া চালু রয়েছে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দূতাবাসে সরাসরি জমা দিতে হয়। আবেদনের জন্য প্রয়োজন হয়ঃ
- মিশর দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অথবা সরাসরি দূতাবাসে ফরম সংগ্রহ।
- আবেদন ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় ফি জমা দেওয়া।
- প্রয়োজনীয় দলিলপত্র সংযুক্ত করা।
- দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের জন্য উপস্থিত হওয়া (যদি প্রয়োজন হয়)।
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র?
ভিসার ধরন অনুসারে কিছু পরিবর্তন থাকলেও, নিচের সাধারণ কাগজপত্রগুলো আবশ্যকঃ
- ন্যূনতম ৬ মাস মেয়াদী পাসপোর্ট।
- ২ কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (যদি প্রযোজ্য)
- ওয়ার্ক পারমিট বা নিয়োগপত্র (ওয়ার্ক ভিসার জন্য)।
বিশেষ ভিসার জন্য বাড়তি কাগজপত্র?
স্টুডেন্ট ভিসার জন্য
- মিশরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফার লেটার।
- টিউশন ফি জমাদানের রসিদ বা স্কলারশিপ প্রমাণ।
বিজনেস ভিসার জন্য
- আমন্ত্রণপত্র
- কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স/ব্যবসায়িক প্রোফাইল।
মিশরে বেতন কত?
বেতন মূলত কাজের ধরন, অভিজ্ঞতা ও চুক্তির উপর নির্ভর করে। তবে সাধারণ গড় হিসেবে বলা যায়ঃ
- সাধারণ শ্রমিকঃ প্রায় ২৫০-৪০০ মার্কিন ডলার (২৫,০০০–৪৫,০০০ টাকা)।
- দক্ষ শ্রমিক বা টেকনিশিয়ানঃ প্রায় ৫০০–৮০০ মার্কিন ডলার (৫০,০০০–৯০,০০০ টাকা)।
- ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার বা পেশাদারঃ ১০০০ মার্কিন ডলার বা তার বেশি।
ভিসা ও ভ্রমণ খরচ?
সরকারি উপায়ে
- ভিসা ও অন্যান্য খরচঃ প্রায় ৩–৪ লাখ টাকা।
- সম্পূর্ণ খরচসহঃ প্রায় ৫–৬ লাখ টাকা।
বেসরকারি উপায়ে
- ভিসা ও অন্যান্য খরচঃ প্রায় ৪–৫ লাখ টাকা।
- সম্পূর্ণ খরচঃ প্রায় ৬–৮ লাখ টাকা।
ট্যুরিস্ট ভিসা খরচঃ
প্রায় ১৫,০০০–২৫,০০০ টাকা (শুধু ভিসা ফি)।
ভ্রমণের সময়কাল?
বাংলাদেশ থেকে কায়রো যেতে সাধারণত ৮–১২ ঘণ্টা সময় লাগে, একাধিক ট্রানজিট থাকলে সময় ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
মিশরের মুদ্রার নাম কি?
মিশরের মুদ্রার নাম ইজিপশিয়ান পাউন্ড (EGP)
বাংলাদেশে মিশরীয় দূতাবাসের ঠিকানা?
- Embassy of the Arab Republic of Egypt
- House 15, Road 6, Baridhara, Dhaka 1212, Bangladesh
- Phone: +880 2 9888098 / +880 2 9888099
- Email: eg.emb.dhaka@gmail.com
আরও পড়ুনঃ ওমান বেতন কত | ওমান ভিসার দাম কত
সতর্কতা
অনেক অসাধু দালাল প্রতারণার মাধ্যমে মিশর পাঠানোর লোভ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে। কম খরচে, দ্রুত ভিসা অথবা “চাকরি নিশ্চিত” এই ধরনের প্রলোভনে পা না দিয়ে সর্বদা বৈধ ও প্রমাণিত উৎস থেকে তথ্য নিয়ে বিদেশ যাত্রা নিশ্চিত করুন।
FQAS: মিশর বেতন কত | মিশর ভিসার দাম কত
মিশরে কি ইংরেজি জানা দরকার?
শহরাঞ্চলে ইংরেজি জানা সহায়ক, তবে কাজের ক্ষেত্রভেদে আরবি জানা বেশি উপকারী।
মিশরে কি স্থায়ীভাবে বসবাস করা যায়?
দীর্ঘমেয়াদী ওয়ার্ক পারমিট বা পারিবারিক ভিত্তিতে বসবাসের অনুমতি পাওয়া যায়।
শেষ কথা
মিশরে চাকরি, ব্যবসা বা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যেতে চাইলে সব ধরণের তথ্য ভালোভাবে যাচাই করে, নির্ভরযোগ্য উৎসের মাধ্যমে প্রস্তুতি নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
ভিসার আবেদন, কাগজপত্র, খরচ ও নিয়মনীতি সম্পর্কে আগেই জানলে যেকোনো প্রতারণা থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।