ইমেইল মার্কেটিং করে আয়
বর্তমান সময়ের ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ইমেইল মার্কেটিং কার্যকারী ভূমিকা পালন করে চলেছে। ইমেইল মার্কেটিংকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রধান অঙ্গ বলা হয়। বর্তমানে অনেক ব্যবসায়ী ইমেইল মার্কেটিংয়ের দিকে ঝুঁকেছে।ইমেইল মার্কেটিংয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা। যার কারণে ইমেইল মার্কেটিং দিনে দিনে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ইমেইল মার্কেটিং কি, ইমেইল মার্কেটিং করে আয় এবং ইমেইল মার্কেটিংএর কয়েকটি সুবিধা সম্পর্কেঃ
ইমেইল মার্কেটিং কি?
ইলেকট্রনিক মেইল এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ইমেইল। ইমেইল সাধারণত টেলি যোগাযোগের মাধ্যমে কম্পিউটারের সঞ্চিত বার্তাগুলো আদান-প্রদান করতে সাহায্য করে। আর বিশ্বের যেকোন জায়গা থেকে তথ্য প্রেরণ এবং প্রাপ্তিতে এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে হয়ে থাকে।
ইমেইলের মাধ্যমে যখন কোন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রোডাক্টের প্রচার করে থাকে, তখন তাকে ইমেইল মার্কেটিং বলে। ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে মুহূর্তেই লাখ লাখ গ্রাহককে কোন প্রোডাক্টের বিবরণ দেওয়া যায়। বর্তমানে ইমেইল মার্কেটিং হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি মার্কেটিং সিস্টেম।
জনপ্রিয় ইমেইল প্রেরণের মাধ্যম সমূহ?
সাধারণত ১৯৭১ সালের দিকে রে টমলিসন প্রথম ইমেইলটি প্রেরণ করেছিলেন। জনপ্রিয় ইমেইল প্রেরণের কয়েকটি মাধ্যমসমূহ হলোঃ
- Gmail
- Yahoo Mail
- Outlook
- Apple Mail
- Samsung mail
তাছাড়া ইমেইল প্রেরণের আরও অনেক ধরনের মাধ্যম রয়েছে। আর এই মাধ্যম গুলো খুবেই জনপ্রিয় এবং সবাই এই মাধ্যম গুলো ব্যবহার করে থাকেন।
ইমেইল মার্কেটিং করে আয়?
ইমেইল থেকে টাকা ইনকাম করার বিভিন্ন উপায় আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি উপায় হলো ইমেইল মার্কেটিং। ইমেইল মার্কেটিং হলো একটি ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল।
যেখানে কোন ব্যক্তি তাদের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে গ্রাহকদের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে তথ্য পাঠায়। আর এই ইমেইল গুলোতে সাধারণত বিশেষ অফার, নতুন পণ্যের তথ্য, ব্লগ পোস্টের লিঙ্ক ইত্যাদি থাকে।
ইমেইল মার্কেটিং করে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়?
নিজের পণ্য বা সেবা বিক্রয়
আপনি যদি কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয় করেন, তাহলে ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে গ্রাহকদের জানিয়ে বিক্রয় বাড়াতে পারেন।
অন্যের পণ্য বা সেবা প্রচার
আপনি অন্য কোনো ব্যবসার পণ্য বা সেবা প্রচার করে কমিশন আয় করতে পারেন।
ইমেইল মার্কেটিং সার্ভিস প্রদান
আপনি যদি ইমেইল মার্কেটিং এর বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। তাহলে অন্যের ব্যবসায় ইমেইল মার্কেটিং সার্ভিস প্রদান করে টাকা ইনকাম করতে পারেন।
ইমেইল মার্কেটিং শুরু করার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি?
ইমেইল তালিকা তৈরি
আপনার কাছে একটি ভালো ইমেইল তালিকা থাকা জরুরি যাদের কাছে আপনি ইমেইল পাঠাবেন।
আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তৈরি
আপনার ইমেইলগুলোতে আকর্ষণীয় এবং উপযোগী কন্টেন্ট থাকা জরুরি যাতে গ্রাহকরা আপনার ইমেইল খুলে পড়েন।
ইমেইল মার্কেটিং টুল ব্যবহার
আপনি ইমেইল মার্কেটিং টুল ব্যবহার করে সহজে ইমেইল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে পারেন।
সতর্কতাঃ
স্প্যাম
অবাঞ্ছিত ইমেইল পাঠানো স্প্যাম। স্প্যাম পাঠানো আইনবিরোধী।
GDPR
ইউরোপীয় ইউনিয়নের GDPR নিয়ম অনুযায়ী, আপনাকে ইমেইল পাঠানোর আগে ব্যবহারকারীর অনুমতি নিতে হবে।
ইমেইল মার্কেটিং এর আরও কিছু বিষয়?
ফ্রিল্যান্সিং
আপনি ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কিত কাজ করে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে পারেন।
ব্লগিং
আপনি আপনার ব্লগে ইমেইল সাবস্ক্রিপশন ফর্ম রেখে ইমেইল তালিকা তৈরি করতে পারেন। এবং পরবর্তীতে তাদের কাছে ইমেইল পাঠিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারেন।
ইমেইল মার্কেটিং এর সুবিধা?
ইমেইল মার্কেটিংয়ের জনপ্রিয় হওয়ার কারণ ইমেইল মার্কেটিং এর সুবিধা। যা সাধারণত মানুষের কাছে একে জনপ্রিয় করে তুলেছে। তাছাড়া ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি অনেক কম খরচে আপনার প্রোডাক্ট বা আপনার ব্যবসার জন্য মার্কেটিং করতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ইমেইল মার্কেটিংয়ের কয়েকটি সুবিধা সম্পর্কেঃ
ইমেইল মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এতে স্বল্প সময়ে অধিক পণ্যের প্রচারণা করা সম্ভব হয়। ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি করা পণ্যের ওপর আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন লাভ করতে পারবেন। যা সাধারণত আপনাকে ব্যবসার ক্ষেত্রে লাভবান করে তোলে।
ইমেইল এড্রেস সংগ্রহের মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ আপনি যার হয়ে কাজ করবেন তার সাথে আপনি চাইলে পূর্বেই চুক্তি রাখতে পারেন। যার ফলে আপনার কাজ করার পথ অনেকটা মসৃণ হয়ে যাবে। আপনি এ সকল বিষয়গুলো জেনে নিয়ে কাজ করতে পারেন।
সাধারণত কোন কোন কোম্পানিতে ইমেইল মার্কেটিং করার জন্য নির্দিষ্ট মাসিক বেতনভুক্ত লোক নিয়ে থাকেন। এবং তাদের ভালো পরিমাণে বেতন দিয়ে থাকে। আপনি চাইলে সেসব কোম্পানিতে কাজ করতে পারেন। ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি অনেক কম সময়ে এবং অল্প খরচে আপনার ব্যবসার জন্য দ্রুত মার্কেটিং করতে পারবেন।
এবং ভালো পরিমাণে মুনাফা আয় করতে পারেন। ইমেইল মার্কেটিং হচ্ছে একটি শহর মার্কেটিং সিস্টেম। যা সাধারণত আপনি কোন ধরনের ভোগান্তির শিকার হওয়া ছাড়াই করতে পারেন। ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনার কাস্টমাররা আপনার পণ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবে। যার ফলে তারা পণ্য কিনতে আগ্রহী হয়।
ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার টার্গেটেড কাস্টমারের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। এবং তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারেন। যার ফলে আপনার পণ্য বিক্রির হার অনেক বেড়ে যাবে।
ইমেইল মার্কেটিং এ ক্যারিয়ার?
ইমেইল মার্কেটিং এর সুবিধা আরো অনেক রয়েছে। বর্তমানে অনেকে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য ইমেইল মার্কেটিং এর দিকে ঝুঁকেছেন। কেননা ডিজিটাল মার্কেটিং এর এই যুগে অনেকে মনে করছেন ইমেইল মার্কেটিং হতে পারে তাদের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য একমাত্র নিয়ামক।
বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মানুষ এখন অফলাইনে পণ্য কেনার চেয়ে অনলাইনে পণ্য কিনতে বেশি আগ্রহী হয়েছে। তাছাড়া অনলাইনে পণ্য কিনতে হলে তেমন বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় না এবং তারা ঘরে বসেই তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্য পেয়ে যায়।
সাধারণত এসব কিছুই সম্ভব হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য। আর ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ বা উপাদান হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং। ইমেইল মার্কেটিং দারুন একটি জনপ্রিয় মার্কেটিং সিস্টেম। ইমেইল মার্কেটিং এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আর তাই আপনি যদি ইমেইল মার্কেটিংকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে চান তাহলে মোটেও ভুল হবে না। আপনি এখানে সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কেননা ইমেইল মার্কেটিং এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বর্তমানে ইমেইল মার্কেটিংয়ের কাজের জন্য তাদের নিজস্ব অফিসে লোক নিয়ে থাকে।
তাছাড়া আপনি চাইলে অনলাইনে ইমেইল মার্কেটিং করার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো থেকে আয় করতে পারেন। যা সাধারণত ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনার ক্যারিয়ার গঠন করতে সাহায্য করবে।
ইমেইল মার্কেটিংয়ের জন্য জরুরী কিছু টিপস?
১. ইমেইল এড্রেস সংগ্রহের সময় এড্রেস এর পাশে চাইলে একটা করে ট্যাগ দিয়ে রাখতে পারেন যে এই অ্যাড্রেসের অধিকারী আসলে কি ধরনের পণ্য বা প্রোডাক্টের প্রতি বেশি আগ্রহী হতে পারেন। সেই সম্পর্কে আপনি এর মাধ্যমে জানতে পারেন।
২. আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত রিসার্চ করতে হবে যে আপনার পাঠানো মেইল গুলো মানুষ দেখছে কিনা বা না দেখলে আপনার মেইল গুলো কিভাবে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায় এবং কি করে মানুষকে দেখানো যায়। সেদিকে অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩. সাধারণত কখনো অযথা হাজার হাজার মেইলে মেইল পাঠিয়ে সময় ও শ্রম নষ্ট না করে প্রথমে ক্লিক বক্স, বাল্ক, মেইল চেকার এর মতো ইত্যাদি ভেরিফ্যায়িং সফটওয়ারের মাধ্যমে চেক করে নিতে পারেন সবগুলো মেইল ঠিক আছে কিনা। আপনার চেকিং শেষে নষ্ট ইমেইলে ঠিকানা গুলো মুছে ফেলতে পারেন।
৪. আপনি সাধারণত যে প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির হয়ে ইমেইল মার্কেটিংয়ের কাজ করবেন। তাদের ওয়েবসাইটে সাইন আপের সময় বাধ্যতামূলকভাবে ইমেইল এড্রেস প্রদানের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। যার ফলে সাইনআপ কারীদের থেকেই অনেক ইমেইল সংরক্ষণ করা যাবে।
৫. যে পণ্যগুলো বিক্রির জন্য আপনি ইমেইল মার্কেটিং করবেন সব সময় চেষ্টা করবেন সেই মেইল গুলো দেখতে যেন অনেক আকর্ষণীয় হয় এবং পণ্যের ক্যাটাগরি ভাগ করা থাকে। যার ফলে গ্রাহকরা তাদের প্রয়োজন মতো ক্যাটাগরির ওপর ক্লিক করলে পৌঁছে যাবেন ওয়েবসাইটের সেই ক্যাটাগরির পেজে।
শেষ কথা
আশা করি আপনারা যারা আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা ইমেইল মার্কেটিং কি, ইমেইল মার্কেটিং করে আয় এবং ইমেইল মার্কেটিং করার সুবিধা গুলো সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
তার পরেও যদি কোন বিষয়ে বুঝতে না পারেন। তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আর আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
বিঃদ্রঃ
মনে রাখবেন ইমেইল মার্কেটিং একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। রাতারাতি সফল হওয়া সম্ভব নয়। ধৈর্য ধরে কাজ করলে আপনি সফল হতে পারবেন।