ম্যাকাও পাখির দাম কত
নীল হলুদ বা ম্যাকাও পাখিগুলো দেখতে অনেকটা অসাধারণ সৌন্দর্যের অধিকারী। এই জাতীয় ম্যাকাও পাখিগুলোর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Ara ararauna। এই পাখিগুলো অনেকে শখের বসে পালন করে থাকেন।
নজর কারা রংয়ের ভিন্নতা এবং কথা বলাই দক্ষতা অর্জন করার জন্য এই পাখিগুলো খুব সহজেই মানুষের মন জয় করতে পেরেছে। নীল সোনালী ম্যাকাও পাখিগুলো দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অরণ্যের ম্যাকাও গোত্রের সর্ববৃহৎ প্রজাতির একটি পাখি।এই পাখিগুলোর পালক অনেকটা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে এবং গায়ের রং হয়ে থাকে সোনালী বর্ণের। এই পাখিগুলো তার বিপরীত লিঙ্গের পাখিগুলোকে নিয়ে সারা জীবন একত্রে বসবাস করে থাকে।
ম্যাকাও পাখির মৃত গাছে বাসা বেধে থাকে। ম্যাকাও স্ত্রী পাখি দুই থেকে তিনটি ডিম পেরে থাকে। ম্যাকাও স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ার পর একটানা ২৮ দিন ডিমের উপর তাওয়া দিয়ে থাকে।প্রায় ৯৭ দিন পর বাচ্চাগুলো বাসা ত্যাগ করে থাকে।
ম্যাকাও পাখি কোথায় পাওয়া যায়?
কিছু বছর ধরে বাংলাদেশ ম্যাকাও পাখি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু অনেকেই জানেন না কোথায় ম্যাকাও পাখি পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ঢাকাতে বসুন্ধরা ৯ নম্বর রোডের পাশে ম্যাকাও পাখি পাওয়া যায়।
এখান থেকে আপনারা সরাসরি ম্যাকাও পাখির বাচ্চা খুবই কম দামে পেয়ে যাবেন। একদম ছোট থেকে মাঝারি সাইজের বাচ্চা আপনারা ঢাকা বসুন্ধরাতে বিভিন্ন পাখির হাটে পেয়ে যাবেন।
ম্যাকাও পাখির পালন পদ্ধতি?
ম্যাকাও পাখি পালন সঠিকভাবে করা হলে লাভজনক হতে পারে। এ পাখির প্রজাতি, রঙ ও বয়সের উপর নির্ভর করে দাম পরিবর্তিত হয়। যাইহোক ম্যাকাও পাখি পালন হল একটি জটিল ব্যবসা।
যার জন্য প্রচুর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। পাখিদের কল্যাণের জন্য নৈতিক এবং আইন মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলদেশে ম্যাকাও পাখির পালন করছে। তারা পাখির Breeding করিয়ে ভাল পরিমানে অর্থ উপার্জন করছেন।
ম্যাকাও পাখির দাম কত?
ম্যাকাও পাখি কেনার আগে অনেকেরই ম্যাকাও পাখির বাচ্চার দাম কত বা ম্যাকাও পাখির জোড়া কত এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।
আমি আপনাদেরকে আগেই বলেছি যে ম্যাকাও হচ্ছে বিদেশি পাখি। বাংলাদেশে এই পাখি সচরাচর পাওয়া যায় না। যেহেতু এই পাখি বিদেশ থেকে নিয়ে আসতে হয় তাই এই পাখির দাম অন্যান্য পাখির তুলনায় অনেকটা বেশি।
অনেকে শখ করে এই পাখি খাচায় পালন করে থাকেন। তিন বছর বয়সের একটি ম্যাকাও পাখির দাম নেওয়া হয়ে থাকে ১,৫০০০০ টাকার মত এবং এই পাখিগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে এরা কেনার পর থেকেই কথা বলতে পারবে।
এক থেকে দেড় কেজি ওজনের যে ম্যাকাও পাখিগুলো আপনারা বাজারে দেখতে পাবেন সেগুলোর দাম নেওয়া হয়ে থাকে বাংলাদেশী টাকায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকার মধ্যে।
প্রাপ্তবয়স্ক গ্রিন ম্যাকাও পাখিগুলোর উচ্চতা হয়ে থাকে ৩৫ থেকে ৩৭ ইঞ্চি। ম্যাকাও পাখির এক থেকে দেড় মাস বয়সী বাচ্চার দাম নেওয়া হয়ে থাকে ১৫ হাজার থেকে বিশ হাজার টাকার মতো।
তাছাড়া ম্যাকাও পাখিগুলোর মধ্যে সব থেকে রঙিন পাখিকে বলা হয় স্কালেট ম্যাকাও। এই সকল প্রাপ্তবয়স্ক পাখিগুলোর মূল্য ১৫ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং বাচ্চাগুলোর মূল্য হয়ে থাকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে।
ম্যাকাও পাখির খাবার?
ম্যাকাও পাখির খাদ্য পরিকল্পনায় সুষমতা ও বৈচিত্র্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র বীজ ও বাদাম তাদের পছন্দ হলেও, এগুলোকে খাদ্যের সামগ্রিক পরিমাণের একটি ছোট অংশ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
নিচে কিছু মূল দিক তুলে ধরা হলো যা একটি কার্যকর ও স্বাস্থ্যসম্মত সীডমিক্স এবং সম্পূর্ণ খাদ্য পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়ক হতে পারেঃ
১. সুষম খাদ্যের উপাদানসমূহ
বীজ ও বাদাম
যদিও এগুলো ম্যাকাওদের প্রিয়, তবে অত্যধিক ব্যবহারে উচ্চ ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধি হতে পারে। খাদ্য তালিকায় এগুলোর হার সীমিত রাখা উত্তম।
ফল ও শাকসবজি
তাজা ফল এবং শাকসবজি ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার সরবরাহ করে। বিভিন্ন ধরনের ফল যেমনঃ আপেল, আঙুর (বীজ ছাড়া), কলা, এবং শাকসবজি যেমনঃ গাজর, পালং শাক ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
ছোলাযুক্ত খাবার
ছোলা ও অন্যান্য ডালভিত্তিক খাবার প্রোটিন ও অন্যান্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে, যা ম্যাকাওদের সর্বাঙ্গীন পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক। এগুলো খাদ্যে সঠিক মাত্রায় দিলে পাখির স্বাস্থ্য বজায় থাকে।
পেলেট এবং ফরমুলেটেড ফুড
বাজারে পাওয়া যায় এমন বিশেষভাবে তৈরিকৃত ম্যাকাওদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য বিকল্প রাখতে পারেন, যা তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তা মেটাতে সাহায্য করে।
পরিষ্কার পানির প্রাপ্যতা
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে তাজা ও পরিষ্কার পানি দিতে হবে, যা ম্যাকাওদের হাইড্রেশন এবং বিপাক ক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২. স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ
উচ্চ কোলেস্টেরল ও এথেরোস্ক্লেরোসিস
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও ফ্যাটযুক্ত খাবার প্রদান এড়িয়ে চলা উচিত। সুষম খাদ্যে কম ফ্যাটযুক্ত ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত উপাদান অন্তর্ভুক্ত করা স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিনের অভাব
বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজি এবং ছোলাযুক্ত খাবার পাখির শরীরে ভিটামিন ও খনিজের অভাব পূরণে সহায়ক। খাদ্য তালিকায় বিভিন্নতা নিশ্চিত করে এমন অভাব প্রমাণিত উপাদানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
৩. পাখি পালন ও বিনিয়োগ
অবকাঠামো ও সরঞ্জাম
ম্যাকাও পাখি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, তবে এর জন্য আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত অবকাঠামো ও সরঞ্জামের প্রয়োজন। পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও খেলাধুলার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
পেশাদারী যত্ন
পাখিদের সঠিক যত্ন ও পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সঠিক পুষ্টি ও পরিচর্যা না পেলে পাখির বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত পশুচিকিৎসকের পরামর্শ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা উচিত।
৪. সামগ্রিক খাদ্য পরিকল্পনা
একটি কার্যকর খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করতে নিম্নলিখিত পরামর্শ মেনে চলা যেতে পারেঃ
খাদ্যের ভাগঃ
- বীজ ও বাদামঃ মোট খাদ্যের প্রায় ২০-২৫%
- ফল ও শাকসবজিঃ ৪০-৫০%
- ছোলাযুক্ত ও অন্যান্য প্রোটিন উৎসঃ ২০-৩০%
- বিশেষভাবে তৈরি পাখি ফুড / পেলেটঃ ১০-১৫%
পরিবর্তন ও বৈচিত্র্য
খাদ্য তালিকায় নিয়মিত পরিবর্তন আনা দরকার যাতে পাখির স্বাদ ও পুষ্টির চাহিদা পরিবর্তনের সাথে সাথে খাপ খায়। মৌসুমি ফল, শাকসবজি ও ডালভিত্তিক খাবার একত্রে ব্যবহার করলে পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।
আরও পড়ুনঃ ফনিক্স সাইকেল দাম
শেষ কথা
আশা করি আজকের পোস্টটি যারা পড়েছেন তারা ম্যাকাও পাখির দাম কত এবং ম্যাকাও পাখি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন।
তারপরেও যদি এই বিষয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে সরাসরি কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনার প্রশ্নটির খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেওয়া হবে। ধন্যবাদ।