নিউজিল্যান্ড বেতন কত | নিউজিল্যান্ড ভিসার দাম কত
নিউজিল্যান্ড প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি উন্নত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যসমৃদ্ধ দ্বীপ রাষ্ট্র। দেশটির রাজধানী ওয়েলিংটন এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র অকল্যান্ড।প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি নাগরিক উন্নত জীবন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে সঠিক নিয়ম ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করাই নিরাপদ এবং বৈধভাবে যাওয়ার মূল চাবিকাঠি।
নিউজিল্যান্ড যাওয়ার উপায়?
নিউজিল্যান্ডে বৈধভাবে যেতে হলে অবশ্যই ভিসা গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা রয়েছে, যেমনঃ
- ওয়ার্ক ভিসা
- স্টুডেন্ট ভিসা
- পারিবারিক পুনর্মিলন/পার্টনার ভিসা
- ট্যুরিস্ট/ভ্রমণ ভিসা
সরকারি উপায়ে যাওয়া
বাংলাদেশ সরকার-স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান BOESL (বোয়েসেল) এখনও নিউজিল্যান্ডের জন্য নিয়মিত প্রোগ্রাম চালু না করলেও ভবিষ্যতে কোন চুক্তিভিত্তিক কর্মী প্রেরণ কার্যক্রম শুরু হলে সেখান থেকেই আবেদন করার সুযোগ থাকবে।
বেসরকারি উপায়ে যাওয়া
নিউজিল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশি এজেন্ট, বৈধ এজেন্সি, অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও স্পনসর পাওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে ওয়ার্ক বা স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই এজেন্সির রেজিস্ট্রেশন ও ইতিহাস যাচাই করে নেওয়া উচিত।
নিউজিল্যান্ড ভিসা আবেদনের নিয়মাবলী?
নিউজিল্যান্ডে যেতে হলে ইমিগ্রেশন নিউ জিল্যান্ড (Immigration New Zealand)-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে আবেদন করতে হয়।
প্রক্রিয়াঃ
- ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
- ভিসার ধরণ অনুযায়ী আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
- আবেদন ফি জমা দিতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
- বায়োমেট্রিক ও সাক্ষাৎকারের জন্য VFS Global এর মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে হয়।
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র?
ভিসার ক্যাটাগরি ভেদে কিছু পার্থক্য থাকলেও সাধারণভাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো হলোঃ
- কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদী পাসপোর্ট
- পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি
- মেডিকেল সার্টিফিকেট (বিশেষ করে Chest X-ray রিপোর্ট)
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
- আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদি)
- কাজ বা শিক্ষার অফার লেটার (ওয়ার্ক/স্টুডেন্ট ভিসার জন্য)
বিশেষ কাগজপত্র?
- স্টুডেন্ট ভিসাঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার, কোর্স ফি জমার রসিদ, IELTS/TOEFL স্কোর
- ওয়ার্ক ভিসাঃ নিয়োগপত্র, স্পন্সর অনুমোদন, CV, অভিজ্ঞতার সনদ
- পার্টনার ভিসাঃ বৈবাহিক সম্পর্কের প্রমাণ (বিয়ের সনদ, ছবি, যোগাযোগের ইতিহাস)
নিউজিল্যান্ড বেতন কত?
নিউজিল্যান্ডে বেতন নির্ভর করে কাজের ধরণ, অবস্থান এবং দক্ষতার ওপরঃ
- সাধারণ শ্রমিকঃ ২০ – ২২ NZD প্রতি ঘণ্টা (প্রায় ১,৪৫০ – ১,৬০০ টাকা)
- দক্ষ পেশাজীবীঃ ২৫ – ৪০ NZD বা তার বেশি প্রতি ঘণ্টা (প্রায় ১,৮০০ – ২,৯০০ টাকা)
- মাসিক গড় আয়ঃ সাধারণভাবে মাসে ৩,২০০ – ৫,৫০০ NZD (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২.৪ – ৪.২ লাখ টাকা)
ভিসা ও ভ্রমণ খরচ?
স্টুডেন্ট ভিসা
- ভিসা ফিঃ ৩৫০ – ৫০০ NZD
- সম্পূর্ণ খরচঃ ১০ – ১৫ লাখ টাকা (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি, প্রুফ অব ফান্ড, হোস্টেল, বিমা ইত্যাদি সহ)
ওয়ার্ক ভিসা
- ভিসা ফিঃ ৪৯৫ NZD (আন্দাজে)
- সম্পূর্ণ খরচঃ ৮ – ১২ লাখ টাকা (নিয়োগপত্র, ফ্লাইট, এজেন্সি ফি, মেডিকেল ইত্যাদি সহ)
ভ্রমণের সময়কাল?
ঢাকা থেকে নিউজিল্যান্ড (অকল্যান্ড/ওয়েলিংটন) পৌঁছাতে সাধারণত ১৮ – ২৫ ঘণ্টা সময় লাগে। একাধিক ট্রানজিট থাকলে সময় ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ পানামা বেতন কত | পানামা ভিসার দাম কত
সতর্কতা
বর্তমানে অনেক দালাল ও ভুয়া এজেন্সি নিউজিল্যান্ডে পাঠানোর নামে প্রতারণা করছে। তারা ভুয়া নিয়োগপত্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফার দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। তাই সবসময়ঃ
- ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইট যাচাই করুন।
- অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করুন।
- প্রতিশ্রুতির চেয়ে প্রমাণপত্রে বিশ্বাস করুন।
শেষ কথা
নিউজিল্যান্ডে পড়াশোনা, কাজ বা স্থায়ী বসবাসের স্বপ্ন পূরণে সঠিক তথ্য, কাগজপত্র এবং পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই। বৈধ উপায়ে আবেদন, সতর্কতা ও প্রস্তুতি নিশ্চিত করলে আপনার নিউজিল্যান্ড যাত্রা হবে নিরাপদ, স্বচ্ছ ও সফল।