দক্ষিণ কোরিয়া বেতন কত | দক্ষিণ কোরিয়া ভিসার দাম কত
দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার একটি উন্নত ও প্রযুক্তিনির্ভর দেশ। প্রতিবছর অসংখ্য বাংলাদেশি নাগরিক জীবিকার উদ্দেশ্যে, শিক্ষার উদ্দেশ্যে কিংবা উন্নত জীবনের আশায় দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেন।তবে সেখানে বৈধভাবে যেতে হলে সঠিক ভিসা প্রক্রিয়া জানা এবং অনুসরণ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর রাজধানী সিউল বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত মহানগর।
দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায়?
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার বৈধ উপায় হলো উপযুক্ত ক্যাটাগরির ভিসা গ্রহণ। নিম্নলিখিত ক্যাটাগরিগুলো প্রযোজ্যঃ
- ইপিএস (EPS) কর্মী ভিসা (E-9)
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসা (E সিরিজ)
- স্টুডেন্ট ভিসা (D-2, D-4)
- ট্যুরিস্ট ভিসা (C-3)
- বিজনেস ভিসা (D-8, D-9)
- পারিবারিক সংযুক্তিকরণ ভিসা (F-3, F-1)
সরকারি উপায়ঃ EPS প্রোগ্রাম (BOESL)
বাংলাদেশ সরকার ও দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে EPS (Employment Permit System) চালু রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায়ঃ
- প্রার্থীদেরকে BOESL (বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড) এর মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
- কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় (EPS-TOPIK) উত্তীর্ণ হতে হয়।
- দক্ষতা যাচাই ও মেডিকেল পরীক্ষার পর নিয়োগ দেওয়া হয়।
সুবিধা
সম্পূর্ণভাবে সরকারি এবং প্রতারণা থেকে মুক্ত, কম খরচে বৈধভাবে চাকরির সুযোগ।
বেসরকারি উপায়
যারা EPS প্রোগ্রামের আওতায় পড়েন না, তারা বিভিন্ন বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে কাজের ভিসা, শিক্ষার ভিসা বা ব্যবসায়িক ভিসা পেতে পারেন।
তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই দক্ষিণ কোরিয়ার ও বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত এজেন্সি বেছে নিতে হবে।
দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা আবেদনের নিয়মাবলী?
দক্ষিণ কোরিয়ার ভিসা আবেদনের নিয়মাবলী কিছুটা ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিন্ন, তবে মূল ধাপগুলো একইঃ
- দক্ষিণ কোরিয়ান দূতাবাসের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করতে হবে।
- নির্দিষ্ট কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবে।
- ভিসা আবেদন ফি জমা দিয়ে ঢাকায় কোরিয়ান দূতাবাসে আবেদন করতে হয়।
- কিছু ভিসার জন্য সাক্ষাৎকার ও মেডিকেল পরীক্ষা আবশ্যক।
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র?
সাধারণ কাগজপত্র (সব ভিসার জন্য প্রযোজ্য):
- ছয় মাসের বৈধ পাসপোর্ট
- দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি
- পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফর্ম
- জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- মেডিকেল রিপোর্ট
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট (বিশেষ করে স্টুডেন্ট/বিজনেস ভিসার জন্য)।
বিশেষ কাগজপত্র (ভিসা অনুযায়ী)?
- স্টুডেন্ট ভিসাঃ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফার লেটার, টিউশন ফি রসিদ, আর্থিক সাপোর্ট ডকুমেন্ট।
- ওয়ার্ক ভিসাঃ নিয়োগপত্র, কোম্পানির অনুমতিপত্র, স্পনসরশিপ পেপার।
- ট্যুরিস্ট ভিসাঃ রিটার্ন টিকিট, হোটেল বুকিং, ভ্রমণসূচি।
দক্ষিণ কোরিয়া বেতন কত?
দক্ষিণ কোরিয়ায় বেতন নির্ভর করে কাজের ধরন ও অভিজ্ঞতার ওপরঃ
- সাধারণ শ্রমিক (EPS) – মাসিক বেতন প্রায় ১,৪০০ – ১,৮০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ১,৫৪,০০০ – ১,৯৮,০০০ টাকা)।
- দক্ষ কর্মী – মাসিক বেতন প্রায় ২,০০০ – ৩,৫০০ ডলার (প্রায় ২,২০,০০০ – ৩,৮০,০০০ টাকা)।
- স্টুডেন্ট পার্টটাইম জব – ঘণ্টায় ৭ – ৯ ডলার পর্যন্ত।
ভিসা ও ভ্রমণ খরচ?
EPS এর মাধ্যমে সরকারি উপায়ঃ
- আবেদন ও প্রস্তুতি খরচঃ প্রায় ৫০,০০০ – ৭০,০০০ টাকা।
- ফ্লাইট ও অন্যান্য খরচঃ ১.৫ – ২ লাখ টাকা।
- মোট খরচঃ ২ – ২.৫ লাখ টাকা।
বেসরকারি উপায়ে ওয়ার্ক/স্টুডেন্ট ভিসাঃ
- ভিসা প্রসেসিংঃ ২ – ৩ লাখ টাকা।
- সম্পূর্ণ খরচঃ ৩.৫ – ৫ লাখ টাকা (কিছু ক্ষেত্রে ৬ লাখ পর্যন্ত হতে পারে)।
ভ্রমণের সময়কাল?
বাংলাদেশ থেকে সিউলে সরাসরি বা এক বা দুইটি ট্রানজিট নিয়ে যেতে হয়। সময় লাগে সাধারণতঃ ৮ – ১৫ ঘণ্টা।
দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রার নাম কি?
দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রার নাম হলো ওন (KRW – Korean Won)।
দক্ষিণ কোরিয়াতে বাংলাদেশি দূতাবাসের ঠিকানা?
- Bangladesh Embassy in Seoul, South Korea
- ঠিকানা: 123-4, Itaewon-ro, Yongsan-gu, Seoul 04350, South Korea
- ফোন: +82-2-796-4056
- ইমেইল: mission.seoul@mofa.gov.bd
আরও পড়ুনঃ ফিলিপাইন বেতন কত | ফিলিপাইন ভিসার দাম কত
সতর্কতা
বর্তমানে অসংখ্য ভুয়া এজেন্সি ও দালাল প্রতারণার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার অফার দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছে।
EPS এর বাইরে কেউ যদি এককালীন অনেক টাকার বিনিময়ে দ্রুত ভিসার প্রলোভন দেখায়, তাহলে বুঝে নিন সেটি প্রতারণা।
সবসময়
- সরকারি উপায়কে অগ্রাধিকার দিন।
- ভিসা সম্পর্কে নিজে জানুন।
- যাচাইযোগ্য এজেন্সির মাধ্যমেই আবেদন করুন।
FAQs: দক্ষিণ কোরিয়া বেতন কত | দক্ষিণ কোরিয়া ভিসার দাম কত
দক্ষিণ কোরিয়ায় কীভাবে কাজের জন্য যাওয়া যায়?
- বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় E-9 ওয়ার্ক ভিসায় কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।
- বাংলাদেশ সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান BOESL (www.boesl.gov.bd) এর মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
- টপিক (EPS-TOPIK) নামক কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ায় কী ধরনের চাকরি বেশি পাওয়া যায়?
- ম্যানুফ্যাকচারিং (কারখানা)
- কৃষিকাজ
- নির্মাণ
- মেরিন/শিপইয়ার্ড
- পরিষেবা খাত
BOESL ছাড়া কি সরাসরি যাওয়া সম্ভব?
না, বাংলাদেশ থেকে সরকারি অনুমোদিত একমাত্র পথ হলো BOESL। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তিগত এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়া আইনগত নয়।
ভিসা কত দিনের জন্য দেওয়া হয়?
E-9 ওয়ার্ক ভিসা সাধারণত ৩ বছরের জন্য হয়। এটি দুইবার পর্যন্ত নবায়নযোগ্য।
শেষ কথা
দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজ, পড়াশোনা বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে যেতে চাইলে অবশ্যই সঠিক তথ্য, বৈধ কাগজপত্র এবং সরকার অনুমোদিত উপায় অনুসরণ করা জরুরি।
একটু সচেতন হলেই আপনি সহজেই প্রতারণা এড়িয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারেন।